তা হে রা ফো য়া রা
চৌধুরী
আফজাল চৌধুরী একাধারে
কবি, বাংলাভাষা
সাহিত্যের শিক্ষক, সুপন্ডিত, সমালোচক, ওজস্বী
বক্তা সর্বোপরি
একজন কান্ডারী,
স্রষ্টার পথে
প্রতিক্ষণ সংগ্রামী, নির্ভীক সৈনিক।
এই বহুমুখী
প্রতিভার অধিকারী
মানুষটি জীবনে
নানা পেশার
নানা দায়িত্ব
পালন করলেও
তিনি বারবার
ফিরে এসেছেন
তাঁর মূল
কর্মক্ষেত্রে। সে ক্ষেত্রটির নাম
সাহিত্য।
সাহিত্যই ছিল
তাঁর জীবনের
প্রধান উপজীব্য। তাঁর
ওজস্বী বক্তব্য
মানুষকে মোহগ্রস্থ
করে তুলতো। তিনি
যা বিশ্বাস
করতেন অকপটে
তা সবার
নিকট প্রকাশ
করতেন।
তাঁর চিন্তা চেতনা ও কর্মে অভূতপূর্ব সঙ্গতি ছিল যা সত্যিই বিস্ময়কর। বিশ্বাসের পক্ষে আধ্যাত্মিক চেতনা সমৃদ্ধ সাহিত্য আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামের প্রতি গভীর অনুরাগ অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত। যারাই তাঁর সান্নিধ্যে আসতেন, সকলেই তাঁর সাথে আলাপচারিতায় মুগ্ধ হতেন। সকলকে তিনি আপন করে নিতেন মুহুর্তের মধ্যে। ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা তাঁর চিন্তা চেতনার কেন্দ্রীয় অংশ হিসাবে জুড়ে থাকত এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা অটুট ছিল।
তাঁর চিন্তা চেতনা ও কর্মে অভূতপূর্ব সঙ্গতি ছিল যা সত্যিই বিস্ময়কর। বিশ্বাসের পক্ষে আধ্যাত্মিক চেতনা সমৃদ্ধ সাহিত্য আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্ব এবং ইসলামের প্রতি গভীর অনুরাগ অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত। যারাই তাঁর সান্নিধ্যে আসতেন, সকলেই তাঁর সাথে আলাপচারিতায় মুগ্ধ হতেন। সকলকে তিনি আপন করে নিতেন মুহুর্তের মধ্যে। ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা তাঁর চিন্তা চেতনার কেন্দ্রীয় অংশ হিসাবে জুড়ে থাকত এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা অটুট ছিল।
ছাত্রজীবনে লিটল ম্যাগাজিনে
গল্প লেখার
মাধ্যমে তাঁর
সাহিত্যঙ্গনে পদচারনা শুরু। প্রথম
কাব্যগ্রন্থ কল্যাণব্রত প্রকাশিত হয় ১৯৬৯
সালে।
এটা ছিল
কাব্যজগতে তৌহিদের পক্ষে একটি বিপ্লবী
গ্রন্থ।
‘বলিও আমার
প্রেম ঈশ্বরের
ভস্ম নয়
ভূমা’ এই
বিপ্লবী উচ্চারনের
মাধ্যমে তিনি
কলাকৈবল্যবাদীদের চিন্তায় মোক্ষম
আঘাত হানতে
সক্ষম হয়েছিলেন। সেই
থেকে বিশ্বাসের
স্বপক্ষে তার
পদচারনা শুরু। দুর্গম
এই পথচলার
যতটা না
বাহ্বা পেয়েছেন
তার চেয়ে
বেশি পেয়েছেন
অপবাদ, শত্র“তা, অবহেলা। কিন্তু
কোনো কিছুই
আফজাল চৌধুরীকে
তাঁর একনিষ্টতা
থেকে ফেরাতে
পারেনি।
সবকিছুই খড়কুটোর
মত ভেসে
গেছে তাঁর
প্রবল ব্যক্তিত্বের
সামনে।
‘শির নাহি
দেগা আমামা’-এই ছিল
তাঁর দর্শন,
যা তিনি
আমৃত্যু ধারণ
করেন।
একজন সংগঠক হিসাবেও
তিনি সফলতার
পরিচয় দেন। ৭০-এর প্রথম
পাদে তিনি
চট্টগ্রাম ‘স্পার্ক জেনারেশন’
নামক সাহিত্য
সংগঠনের প্রধান
পৃষ্টপোষক হিসাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তাঁর
বলিষ্ট ও
বিপ্লবী ঘোষণা
‘আমরা ঈশ্বরের
ভাষায় কথা
বলি’।
যা তৎকালীন
সময়ে ছিল
একটি দুঃসাহসিক
প্রত্যয়।
১৭৯৪ সালে ‘সামগীত
দুঃসময়ের’ কবিতাটি
ইত্তেফাকের রবিবাসরীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হবার
পর ব্যাপকভাবে
পঠিত হয়
এবং পাঠক
মহলে সাড়া
জাগে।
দৈনিক সংবাদের
তৎকালীন সাহিত্য
সম্পাদক দাউদ
হায়দার অবার্চীনের
মত এই
কবিতার ভাব
কল্পনার বিরুদ্ধে
তার কুখ্যাত
কবিতাটি দৈনিক
সংবাদের সাহিত্য
পাতায় প্রকাশ
করে।
সঙ্গে সঙ্গে
অগ্নোৎপাতে সারাদেশ বিস্ফোরিত হয় এবং
প্রবল গণঅভ্যূত্থানের
সূচনা হয়। সরকার
দাউদ হায়দারকে
নির্বাসিত করে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়কাল
ছিল একটি
ক্রান্তিকালীনসময়। এই সময়টাতে ভারতসহ
পাশ্চাত্য বিশ্ব ৭১-এর স্বাধীনতাকে
এদেশের জনগনের
ইসলাম পরিত্যাগের
উপাত্ত হিসাবে
ঠাহর করে
বসেছিলো।
ফলে জনগনকে
ধর্মান্তরিত করণের দুরাকাঙ্খায় তারা গোপন
ব্লুপ্রিন্টসহ সরাসরি মাঠে নেমে আসে। সত্তরের
দশকে প্রচুর
মিশনারী পাঠিয়েছে
এবং প্রচুর
অর্থ ঢেলেছে
এ কাজে। এরকম
একটি মিশনারী
দলের অপতৎপরতাকে
যথোপযুক্ত ও বলিষ্ঠভাবে মোকাবেলায় আফজাল
চৌধুরী স্বভাবসূলভ
দৃঢ় ভূমিকা
পালন করেন। ১৯৭৬
সালের একটি
ঘটনা।
একটি মিশনারী
দল সিলেট
এমসি কলেজের
ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করে।
সহকর্মীবৃন্দের অনুরোধে প্রভাষক আফজাল চৌধুরী
তাদের সাথে
আলোচনা করেন। কথা
প্রসঙ্গে প্রিয়
নবী (সাঃ)
-কে ভন্ড
হিসাবে দাবি
করার দুঃসাহস
দেখায়।
পরিস্থিতি বিস্ফোরণমূলক হয়ে উঠে।
এহেন অপ্রীতিকর
অবস্থা থেকে
উত্তরণের জন্য
এবং তাদের
দূরভিসন্ধিকে মিসমার করার জন্য কবি
আফজাল চৌধুরী
তাদেরকে এমসি
কলেজ মাঠে
সকল ছাত্রছাত্রী
এবং অধ্যাপকবৃন্দের
সামনে মোবাহালা
করার দুঃসাহসিক
চ্যালেঞ্জ জানান। এবং তাঁর
এই সাহসিকতাপূর্ণ
এবং যুগান্তকারী
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস মিশনারীগণ
পায়নি।
ভীত এবং
লজ্জিত হয়ে
তারা এমসি
কলেজ প্রাঙ্গন
ত্যাগ করে।
পরবর্তীকালে তাদের একজন
প্রতিনিধি কবির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা
করেন এবং
সেদিনের চ্যালেঞ্জের
জবাব প্রদান
করতে চান
অলৌকিক কিছু
একটা দেখিয়ে। কবি
বিনীতভাবে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান এবং
বিষয়টি ফয়সালা
অলৌকিক নয়
বরং লৌকিকভাবে
করার জন্য
বাহাসের প্রস্থাব
দেন।
ইসলাম ধর্ম
বনাম খৃষ্টান
ধর্মের সত্যতা
নিরূপণে প্রকাশ্যে
বির্তক সভায়
মরহুম মাওলানা
আব্দুল হান্নান
(মাদরাসা-ই-কাসিমুল উলুম
দরগাহ-ই
শাহজালালের তৎকালীন বিদগ্ধ মুহাদ্দিস) ও
তাঁর সাথে
দোভাষী হিসাবে
কবি আফজাল
চৌধুরী কুরআন,
হাদিস ও
খ্রিষ্টীয় যুক্তিতর্ক দিয়ে তাদের পরাস্ত
করতে সক্ষম
হন।
সন্ধ্যলগ্ন থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত
জনাকীর্ণ তর্ক
সভায় শ্বেতাঙ্গ
ভদ্রলোকগণ লা-জওয়াব হয়ে সভা
মুলতবী ঘোষণা
করেন।
পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে
আরও প্রকাশ্যে
বাহাসের কথা
থাকলেও মিশনারী
ভদ্রলোকগণ সম্মত হননি। অন্যদিকে
তাদের এই
অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠে। এভাবেই
সিলেট অঞ্চল
ধর্মান্তকরণের সুচিন্তিত পদক্ষেপ বাধাগ্রস্থ হয়েছিল। ১৯৮১
সালে ২রা
মার্চ কুখ্যাত
সরদার আলাউদ্দিন
সিলেট সমাচারে
কুরআন ও
বিশ্বনবী (সাঃ) এর প্রতি অপমানকর
ও ঘৃনা
সম্বলিত একটি
নিবদ্ধ প্রকাশ
করে।
এর প্রতিবাদে;
জনতা ফেটে
পড়ে।
সরদার আলাউদ্দিনের
শাস্তি দাবি
ও সিলেট
সমাচারের ডিক্লারেশন
বাতিলের দাবি
করা হয়। ১৮ই
ফাল্গুন ১৩৮৮
সালে ইসলাম
বিরোধী কার্যকলাপ
প্রতিরোধ কমিটির
আহবানে প্রতিবাদে
সামবেশ ও
পরে বিক্ষোভ
মিছিল অনুষ্ঠিত
হয়।
উক্ত শান্তিপূর্ন
মিছিলে হামলা
করা হয়
এবং শাহাদাত
বরণ করেন
নওমুসলিম দিলীপসহ
আরও কয়েকজন। আহত
হন কয়েক
শতাধিক এবং
কারাবরণ করেন
আরো অনেকে। সরকার
সারা শহরে
কার্ফু জারী
করে।
তদন্ত কমিশন
গঠন করে
সামগ্রিক ব্যাপারে
ব্যবস্থা গ্রহণে
আশ্বাস দেন। এই
সংকটময় মুহুর্তে
আফজাল চৌধুরীর
নেপথ্য নায়ক
হিসাবে জোরালো
ভূমিকা পালন
করেন।
তিনি তখন
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের
সিলেট বিভাগের
দায়িত্ব ছিলেন।
১৮ই ফাল্গুনের সম্পর্কে
তাঁর অমর
গাঁথা-
রক্ত শপথে মহীয়ান
তুমি
আঠারোই ফাল্গুন
আঠারোই ফাল্গুন
অভিশাপ পদদলের দিন
আঠারোই ফাল্গুন।
ধর্মের পথে শহীদের
ত্যাগ
ব্যর্থ হয় না
জানি
ব্যর্থ হবে না
তোমার
আমার পরমাত্মীয় বাণী
ঝড়াতে হবে না
ফুটপাতে
আর হৃদয়ের তাজা
খুন
আঠারোই ফাল্গুন।
এমনিভাবে যখনই ইসলাম
বিরোধী শক্তি
তাদের বিষাক্ত
নখের থাবায়
বাংলাদেশের এ পবিত্র জমিনকে রক্তাক্ত
ক্ষতবিক্ষত করেছে তখনই আফজাল চৌধুরীর
কলম তলোয়ারের
ন্যায় ঝলসে
উঠেছে।
নগ্নভাবে উন্মোচিত
করে দিয়েছিন
তাদের অপতৎপরতা। ৯০-এর দশকের
প্রথম দিকে
জাতীয় কবিতা
উৎসবে শ্লোগান
ছিল ‘কবিতা
রুখবেই মৌলবাদ’। কবি
আফজাল চৌধুরীর
সাহসী কলম
মৌলবাদের পক্ষে
কবিতা রচনায়
গর্জে উঠে।
২০০০ সালে শাহজালাল
বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলের বিতর্কিত
নামকরণকে কেন্দ্র
করে গড়ে
ওঠে প্রবল
গণআন্দোলন।
এ আন্দোলনে
স্বতঃস্ফুর্তভাবে সক্রিয় ভূমিকা
পালন করেন
কবি আফজাল
চৌধুরী।
তাঁরই উদ্যোগে
অন্যান্য কবি
সাহিত্যকদের সমন্বয়ে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা
দিবসে শাহজালাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অনুষ্ঠিত হয়
কবিতা পাঠের
উৎসব।
এই কবিতা
পাঠের উৎসবে
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্রী হলের
বিতর্তিত নামকরণকে
কেন্দ্র করে
গঠিত আন্দোলনে
প্রাণ উৎসর্গকারী
শহীদ বেলাল
এবং আহতদের
উদ্দেশ্যে নিবেদিত কবির গীতি পংক্তিমালা
নিম্নরূপ ঃ
ভুলতে আমি পারব
না ভাই
আমার ভাইয়ের
প্রীতি
আমার বুকে তুফান
তোলে শহীদানের
স্মৃতি॥
ফাল্গুন মাসের কঁচি
কঁচি পাতার
মত যারা
একটি পাতা দু’টি কুঁড়ির
স্বপ্নে ছিল
তারা,
জীবন দিয়ে উঁচু
করল তাওহীদেরই
রীতি॥
তিনশ’ষাট আউলিয়ার
দেশে এদের
রক্তধারা
মরুপথে হারাবে এই
কথা ভাবেন
যারা
তারা যতই বলুন
এসব আপন
ভোলা নীতি॥
আমার বুকে তুফান
তোলে শহীদানের
স্মৃতি
গাইব আমি জীবন
ভরে এই
শাহাদাতের গীতি॥
কবি আফজাল চৌধুরী
আমৃত্যু তৌহিদী
চেতনাকে বক্ষে
ধারণ করেছিলেন। মৃত্যুর
দু’ঘন্টা
আগেও তিনি
ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার
স্বপক্ষে কথা
বলেন।
তাঁর মনোজগতে
সব সময়
বিপ্লবী চেতনাকে
ধারণ করতেন। দূর্জয়
সারেঙের মত
অটল অবিচল
চিত্ত তাঁর
চরিত্রের বৈশিষ্ট্য
মন্ডিত দিক।
কবিরা স্বপ্ন দেখেন,
স্বপ্ন দেখাতে
ভালোবাসেন।
আফজাল চৌধুরী
ও এর
ব্যতিক্রম নন। এই স্বপ্ন
দেশ ও
জাতিকে ঘিরে
আবর্তিত।
তিনি তাঁর
দেশ ও
কাল সম্পর্কে
সচেতন এবং
রাজনৈতিক একটি
চিন্তাধারা তিনি প্রগলভ প্রচারক।
হোসেন শহীদ
সোহরাওয়ার্দী, শরৎবসু, আবুল হাসিম ও
মাওলানা ভাসানীর
নিখিল বাংলা
ও আসামকে
সংযুক্ত করে
এক দেশ
সংগঠনের উদ্যোগের
তিনি অধঃস্তন
লালনকারী।
নওয়াব সলিমুল্লাহকে
তিনি এই
স্বপ্নের মূল
হোতা মনে
করেন।
তিনিই তাঁর
এই স্বপ্নের
সম্ভাব্য দেশটিকে
একটি নামকরণও
করেছেন।
‘বাংলাসাম’ হলো
তার এই
নাম।
কবি আফজাল চৌধুরীর
বেশ কিছু
প্রকাশিত ও
অপ্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। ‘কল্যানব্রত’,
‘হে পৃথিবী
নিরাময় হও’,
‘শ্বেতপত্র’,
‘সামগীত দুঃসময়ের’,
‘ঐতিহ্য চিন্তা
ও রসূল
প্রশস্তি’, নয়া
পৃথিবীর জন্য
(কাব্য), শবমেহেরের
ছুটি (কাব্য),
বিশ্বাসের দীওয়ান (কাব্য), সিলেট বিজয়
(নাটক), তাঁর
কাব্যলোকে সৈয়দ আলী আহসান ও
বার্ণাবাসের বাইবেল এই কয়টি গ্রন্থ
প্রকাশিত হয়েছে। বাকী
বইগুলো প্রকাশের
অপেক্ষায়, সিলেটের সুফী সাধনা, নান্দনিক
ভূবন, মক্কার
পথ; মুহাম্মদ
আসাদের মহাজীবন,
নাটিকা: ক্ষুদিত
ক্যাম্পাস, ‘বন্দী আরাকান ও অন্যান্য
কবিতা (কাব্য),
অন্য গোলার্ধে
হৃদয় (কাব্য),
খোশহাল খান
খটকের জন্য
পংক্তিমালা (কাব্য), শাশ্বতের পক্ষে কবিতা
(কাব্য), বাঁশি
(কাব্য নাটক),
অনুবাদ কবিতার
মধ্যে রয়েছে
জালালুদ্দীন রুমীর কবিতা ও আলী
শরীয়তীয় কবিতা। প্রবন্ধ
ঃ কবিতার
সংসারে জটিলতা,
প্রতিশ্র“ত
কথকথা ইত্যাদি। বায়তুল
মোকাররমের তৎকালীন খতীব জনাব মরহুম
ওবায়দুল হকের
সহায়তায় তিনি
১০ পারা
কোরআন শরীফ
অনুবাদও করেন।
আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসনের
পরিপ্রেক্ষিতে কবি আল মাহমুদকে নিয়ে
‘আফগানিস্তান আমার ভালবাসা’
নামে তাঁর
একটি আন্তর্জাতিক
মানের সংকলন
১৯৮০ খৃষ্টাব্দে
ওআইসি’র
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে
প্রকাশ করা
হয়।
এ প্রসঙ্গে
কবি আল
মাহমুদের বক্তব্য
প্রণিধনযোগ্য ‘আমাদের যৌথ সম্পাদিত গ্রন্থ
হলেও এ
সংকলনের প্রায়
পুরোপুরি দায়িত্ব
পালন করেছেন
কবি আফজাল
চৌধুরী।
বাংলা সাহিত্যের
ইতিহাসে এ
গ্রন্থটির সমতুল্য কোন গ্রন্থ পাওয়া
হবে কষ্টকর।’
ঐতিহ্য নামক একটি
মাসিক সাহিত্য
পত্রিকাও ঢাকা
থেকে তাঁর
সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল।
ঐতিহ্য চিন্তা ও
রসূল প্রশস্তি
গ্রন্থে ইসলামের
অভ্যূদয় থেকে
বাংলাদেশে ইসলামী সভ্যতার পূর্ণ প্রতিষ্ঠাকাল
পর্যন্ত এবং
সেখান থেকে
বর্তমানকাল পর্যন্ত যে সাংস্কৃতিক, ধারার
উদ্ভব ও
বিকাশ হয়েছে
তার ব্যাখ্যা
ও সূত্র
নির্ধারণ এবং
গতি প্রকৃতির
নিপুন বিশ্লেষণ
সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মোকাবেলায় সমকালীন যুব
শক্তিকে উজ্জীবিনী
মন্ত্রে দীক্ষিত
এবং রেনেসাঁর
আলোক নির্দেশ
করা হয়েছে।
আফজাল চৌধুরী অনুদিত
‘বার্নাবাসের বাইবেল’ গসপেল
অব বার্নাবাসের
অতি সফল
প্রথম অনুবাদ। এই
গ্রন্থটিই যে মূল ইঞ্জিল কিতাব
একথা এখন
প্রায় স্বীকৃত। গ্রন্থটি
ব্যাপকভাবে আমাদের পাঠক সমাজের কাছে
পরিচিত লাভ
করেছে।
কবি আফজাল চৌধুরী
১৯৪২ সালের
১০ই মার্চ
হবিগঞ্জ শহরে
এক সম্ভ্রান্ত
পরিবারে জন্মগ্রহণ
করেন।
তাঁর পৈত্রিক
নিবাস বাহুবল
থানার খাগাউড়া
গ্রামে।
তাঁর পিতার
নাম প্রফেসর
মাওলানা আব্দুল
বসীর চৌধুরী
এবং মাতার
নাম সৈয়দা
ফয়জুন নেসা
খাতুন।
তাঁর পিতা
আব্দুল বসীর
চৌধুরী টাইটেল
পাশ করে
অনার্সসহ বি.এ পাশ
করেন এবং
আরবীতে এম.এ পাশ
করেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আব্দুল বসীর
চৌধুরী হবিগঞ্জ
সরকারী হাইস্কুলে
হেড মাওলানা,
ঢাকা সরকারী
ইন্টারমিডিয়েট কলেজের লেকচারার এবং সলিমুল্লাহ
কলেজে ভাইস
পিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি এ্যাংলো
এ্যারাবিক গ্রামার এবং এ্যাংলো এ্যারাবিক
ট্রান্সলেশন নামক দু’খানি পাঠ্য
পুস্তকও রচনা
করেন।
তিনি ছিলেন
একজন কামেল
ধার্মিক ব্যক্তি। নবাব
সলিমুল্লাহর উৎসাহে তিনি ইংরেজীসহ উচ্চ
শিক্ষা লাভ
করেন।
আফজাল চৌধুরীর মাতা
সৈয়দা ফয়জুন
নেসা খাতুন
ছিলেন মাধবপুর
থানার ইটাখলা
নিবাসী বিশিষ্ট
জমিদার সৈয়দ
শফি উদ্দিনের
কন্যা এবং
দানবীর ও
রাজনীতিবীদ সৈয়দ সঈদ উদ্দিনের বোন। সৈয়দ
সঈদ উদ্দিন
ছিলেন পূর্ব
পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং
পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী। প্রফেসর কবি
আফজাল চৌধুরীর
পূর্ব পুরুষ
ঐতিহাসিক ফকির
বিদ্রোহের ফকির বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মজনু
শাহ মস্তানের
পুত্র পরাগল
শাহ ইংরেজের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে
পরাজিত হয়ে
আত্মগোপন করেন,
পরে নবীগঞ্জ
উপজেলার রুকনপুর
গ্রামে এক
সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে
বসবাস করতে
থাকেন।
আত্মগোপনকারী পরাগল শাহ নাম পরিবর্তন
করে নিজ
নাম রাখেন
শেখ নজির। তিনি
দ’পুত্রের
জনক।
তার পুত্রেরা
হলেন শেখ
ধনাই ও
মেখ মনাই। শেখ
ধনাই ও
শেখ মনাই
স্বীয় বুদ্ধি
বলে অনেক
ভূ-সম্পত্তির
মালিক হন। তাদের
নামে দু’টি তালুক
আছে।
শেখ ধনাই বাহুবল
থানার খাগাউড়া
গ্রামে ভূ-সম্পত্তি করে
নতুন আস্তানা
স্থাপন করে
স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন।
তিনি দু’পুত্রের জনক
শেখ কিছমত
ও শেখ
আবেদ।
শেখ কিছমত
একজন ধর্মপ্রাণ
ব্যক্তি ছিলেন। তিনি
হজব্রত পালন
করেন।
শেখ কিছমত
ও শেখ
আবেদ পৈত্রিক
সূত্রে প্রাপ্ত
ভূ-সম্পত্তি
ছাড়াও অনেক
ভূ-সম্পত্তির
মালিক ছিলেন। তাদের
নামেও দু’টি তালুক
আছে।
হাজী শেখ
আবেদের পুত্র
মোহাম্মদ জহীর
চৌধুরী তৎপুত্র
মোহাম্মাদ মনছুর চৌধুরী ও শায়খুল
কুররা ইউছুফ
চৌধুরী।
শায়খুল কুররা
ইউছুফ চৌধুরী
ছিলেন শিক্ষক
আলেম ও
ইসলাম প্রচারক। মোহাম্মদ
মনছুর চৌধুরীর
পুত্র মৌলানা
আব্দুর বসীর
চৌধুরী।
তৎপুত্র আফজাল
চৌধুরী।
আফজাল চৌধুরীর
অগ্রজ হলেন
কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী ও ইয়াকুত
চৌধুরী।
কবি আফজাল চৌধুরীর
স্ত্রী সিলেট
শহরের রায়নগর
নিবাসিনী নূরুন্নাহার
বেগম।
নূরুন্নাহার বেগমের পূর্বপুরুষ ১৮৫৭ সালে
সিপাহী বিদ্রোহের
সময় কাশ্মীর
হতে এদেশে
আগমন করেন
এবং এখানেই
স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
কবির তিন
পুত্র ও
এক কন্যা। প্রথম
পুত্র মুহাম্মদ
জুলকারনাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক
স্টাডিজে বি.এ অনার্স
এম.এ
পাশ করে
বাহরাইনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি শেষ
করে বর্তমানে
স্ত্রী-সন্তানসহ
কানাডায় স্থায়ীভাবে
বসবাস করছেন। দ্বিতীয়
পুত্র মুহাম্মদ
হাসনাইন এম.সি কলেজ
থেকে বি.এ পাশ
করে এল.এল.বি
পড়ে বর্তমানে
বাহরাইনে কর্মরত
আছেন।
তৃতীয় পুত্র
মুহাম্মদ যুননূরাইন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
কুষ্টিয়াতে আল কুরআন এন্ড ইসলামিক
স্টাডিজ বিভাগে
মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে মদন
মোহন বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজে শিক্ষকতা
করছেন।
একমাত্র কন্যা
তাহেরা ফোয়ারা
চৌধুরী শাহজালাল
বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল
স্টাডিজ এন্ড
পাবলিক এমডিনিস্ট্রেশন
বিভাগে মাস্টার্স
শেষ করে
একটি বেসরকারী
স্কুল এন্ড
কলেজে শিক্ষকতা
করছেন।
জামাতা জাহেদুর
রহমান চৌধুরী
শাহজালাল বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স
শেষ করে
সিলেট ক্যাডেট
মাদরাসার পরিচালক
ও বিভিন্ন
সাহিত্য সাংস্কৃতিক
সংগঠনের সাথে
সম্পৃক্ত রয়েছেন।
কবির শিক্ষাজীবন শুরু
হয় তাঁর
নিজ শহর
হবিগঞ্জে।
মেট্রিকুলেশন ১৯৫৮ সালে হবিগঞ্জ সরকারী
উচ্চ বিদ্যালয়
থেকে।
উচ্চ মাধ্যমিক
হবিগঞ্জ বৃন্দাবন
কলেজ, বি.এ অনার্স
এবং এম.এ ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে।
কর্মজীবনের সূচনা হয়
সরকারী কলেজের
প্রভাষক হিসেবে
তৎকালীন রাজশাহী
সরকারী ইন্টামিডিয়েট
কলেজ থেকে। পরবর্তীকালে
সিলেট এমসি
কলেজ, চট্টগ্রাম
কলেজ, আবার
সিলেটের এমসি
কলেজের বাংলা
বিভাগে তিনি
অধ্যাপনা করেন। সেখান
থেকে ইসলামিক
ফাউন্ডেশনে যোগদান করেন এবং সিলেটের
কেন্দ্রটি তার হাতে প্রতিষ্টা লাভ
করে।
সিলেট থেকে
তিনি ইসলামিক
ফাউন্ডেশনের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে পরিচালক
হিসাবে যোগদান
করেন।
ইসলামী ফাউন্ডেশন
থেকে তিনি
ঢাকা শিক্ষা
বোর্ড বিদ্যালয়ের
উপ-পরিচালক
হিসাব কর্মরত
থাকেন।
অতঃপর তিনি
সিলেট মহিলা
কলেজে বাংলা
বিভাগের সহযোগী
অধ্যাপক হিসেবেও
কর্মরত থেকে
অধ্যাপক পদে
পদোন্নতি লাভ
করে এমসি
কলেজের বাংলা
বিভাগের প্রধানরূপে
১৯৯০ থেকে
৯৫ পর্যন্ত
কর্মরত ছিলেন। এই
সময়ে তিনি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
সিনেট সদস্য
পদ লাভ
করে।
১৯৯৬ সাল
থেকে হবিগঞ্জ
বৃন্দাবন কলেজের
অধ্যক্ষ হিসাবে
যোগদান করেন
১৯৯৯ সালের
প্রথম পাদে
অবসর গ্রহণ
করেন।
কবি আফজাল চৌধুরী
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের
ঢাকা বিভাগের
পরিচালক থাকাকালে
১৯৮৪ সালে
মার্কিন সরকারের
আমন্ত্রণে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটিং প্রোগ্রামে একমাস
ব্যাপী মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের ৮টি রাজ্য সফর করেন
এবং যাবার
পথে ইংল্যান্ডে
যাত্রা বিরতি
ও ফেরার
পথে সৌদী
আরবে পবিত্র
ওমরা পালন
করে পাকিস্তান
সফর করে
দেশে ফেরেন। এই
সময় তার
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার কবিতাবলী ‘অন্য গোলার্ধে
হৃদয়’ এবং
বিশ্বাসের দীওয়ান’ রচিত
হয় এবং
তাঁর একটি
আর্ন্তজাতিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে।
কবি ষাট বৎসর
বয়সে সিলেটের
মর্যাদাপূর্ন পুরস্কার ‘রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য
পুরস্কার ২০০২
লাভ করেন। দ্বীনের
মুজাহিদ ইসলামের
ঝান্ডাবাহী এই কবি ১৯ই জিলকদ
১৪২৪ হিজরী,
২৬শে পৌষ
১৪১০ বাংলা,
৯ই জানুয়ারী
২০০৪ ঈসায়ী
তারিখে স্থানীয়
একটি ক্লিনিকে
সন্ধ্যা ৪.৪০ মিনিটে
শেষ নিঃশ্বাস
ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহি
ওয়া ইন্না
ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর
নাতিদীর্ঘ অথচ বর্ণাঢ্য জীবনের সমস্ত
কর্মতৎপরতাকে আল্লাহপাক কবুল করুন।
আমীন।
লেখকঃ কবি আফজাল
চৌধুরীর একমাত্র
তনয়া
0 comments:
Post a Comment